Image description

সুলতান আহমেদ রাহী

২০০৯ সাল থেকে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পরপরই সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে দলীয়করণ শুরু করা হয়। এমনকি বাংলাদেশ সরকারী কর্ম কমিশন-এর মতো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকেও দুর্নীতির অন্যতম আসরে পরিণত করেছে তারা। এদের শাসনামলে রাজনৈতিক বিবেচনায় এবং অর্থের বিনিময়ে যখন গণভবন ও আওয়ামী লীগের কার্যালয় থেকে দেওয়া তালিকা অনুসারে চাকুরি নিয়োগ ও প্রমোশন হয় ।

যখন দেশের সকল সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান সমূহ কলুষিত করে, রাষ্ট্রীয়ভাবে চাকুরির নিয়োগে দুর্বৃত্তায়ন করা হয় তখন শুধুমাত্র কোটা সংস্কার বা বাতিল করে মেধাবী ও যোগ্য শিক্ষার্থীদের চাকুরি নিশ্চিত করা অসম্ভব।

আসুন শেখ হাসিনা সরকারের দলীয়করণ, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, চাকুরি নিয়োগ নিয়ে লুটপাটের দৌরাত্মের নমুনা কিছু দেখে নেই... রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এম আবদুস সোবহান ছাত্রলীগ কর্মীদের আশ্বাস দিয়ে বলেছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে ‘সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার’ পাবে ছাত্রলীগ।

তিনি ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দকে বলেনঃ তিনি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে কথা বলেছেন। তিনি বলেন, ‘অপেক্ষা করো। দু-চার দিন দেখো। ‘তোমাদের চাকরি মিস হবে না। তার কিছুদিন পরেই দেখলাম আমরা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো বিভাগ যখন জনবল চায়নি, বিভাগের প্লানিং কমিটি কোনো শিক্ষক নিয়োগ চেয়ে সুপারিশ করেনি, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো অফিস জরুরিভিত্তিতে জনবল চেয়ে চাহিদাপত্রও পাঠায়নি।

চাহিদা না দেওয়া সত্ত্বেও উপাচার্য অধ্যাপক আবদুস সোবহান তড়িঘড়ি করে ১৩৭ জনকে অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ দেন। বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত থেকে জানা যায়, ‘অবৈধ’ উপায়ে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পরিচয় হলো, তারা ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের রাজনীতির সমর্থক পরিবারের সন্তান, প্রত্যক্ষভাবে ছাত্রলীগ কিংবা যুবলীগের নেতাকর্মী।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আবদুস সোবহানের ১৩৭ জনকে নিয়োগের ঘটনায় বিচার দাবি করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল সহ শিক্ষার্থীরা তখন উপাচার্য দাপটের সাথে নির্লজ্জ ভাবে সাংবাদিক সম্মেলন করে বলেন-"এই নিয়োগ আইনের পরিপন্থী নয়। উপাচার্যকে ৭৩ এর অধ্যাদেশে এ ক্ষমতা দেওয়া আছে। আমি মানবিক কারণে তাঁদের চাকরি দিয়েছি। যারা নিয়োগ পেয়েছেন তাদের অধিকাংশই ছাত্রলীগের এবং আওয়ামী পরিবারের।

তিনি একবারও ভাবলেন না ৫ কোটি ছাত্রসমাজের অনিশ্চিত জীবন। যে দেশে ২৬ লাখ বেকার শিক্ষিত মানুষ গুলো বেকারত্বের চাঁদরে মোড়ানো মুখগুলো বাকশক্তিহীন কষ্টে হতাশা নিয়ে দিনযাপন করছে, তারা চাকুরি না পেয়ে অভাবে কেউ কেউ আত্মহত্যা পথ বেছে নিচ্ছেন সেখানে মেধাবী যোগ্যদের বঞ্চিত করে অযোগ্য রাজনৈতিক দলীয় বিবেচনায় ও টাকার বিনিময়ে কোন প্রতিযোগিতা ছাড়ায় চাকুরিতে নিয়োগ পত্র তুলে দিলেন।

আমরা অতিতে দেখেছি আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার প্রভাবশালী রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইটি টি ইমাম বলেছিলেন- ছাত্রলীগের কর্মী হলে নাকি তাঁদের মৌখিক পরীক্ষা বা ভাইভা নেওয়ারই প্রয়োজন হবে না। সে বিষয়টি পিএসসির পক্ষে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা হিসাবে নিজে দেখবেন। এইচ টি ইমাম সবচেয়ে ভয়ংকর যে কথাটি বলেছিলেন তা হলো, ‘নির্বাচনের সময়, বাংলাদেশ পুলিশে, প্রশাসনে যে ভূমিকা, নির্বাচনের সময়ে আমি এইচ টি ইমাম তো প্রতিটি উপজেলায় কথা বলেছি। সব জায়গায় আমাদের যারা রিক্রুটেড, তাদের সঙ্গে কথা বলে তাদের দিয়ে মোবাইল কোর্ট করিয়ে আমরা নির্বাচন করেছি। তারা আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে, তারা বুক পেতে দিয়েছে। তাদের কারনে আমরা ক্ষমতায় আছি তাই আমরা আরো দলীয় ছেলেদের চাকুরি দিবো। ছাত্রলীগ ছাড়া কেউ চাকুরি পাবে না।

আবার ছাত্রলীগ যখন সারা দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশে হামলা চালায়, ক্যাম্পাসে আসা প্রাক্তন ছাত্রী ও ছাত্রের ওপর হামলা করে তখন যদি কেউ প্রতিবাদ করে, সেটি ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে হয় বলে গণভবনে ছাত্রলীগের সমাবেশে প্রধানমন্ত্রীপুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় রাগ্বানিত হয়ে প্রতিবাদকারীদের সমালোচনা করেছিলেন, এমনকি ছাত্রলীগের কর্মীদের সম্পর্কে যাঁরা অভিযোগ সমালোচনা করবে, তাঁদের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছিলেন।

তিনি বলেন ছাত্রলীগের বিপক্ষে কোন কিছু করা যাবে না কিংবা ছাত্রলীগ যা-ই করুক না কেন, তাদের সম্পর্কে কিছু বলা যাবে না। এইভাবে বক্তব্য দিয়ে তিনি ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী কার্যকলাপ করা, লাঠিয়াল বাহিনী হিসাবে ব্যবহৃত হবে এবং এর বিনিময়ে তারা সব অপকর্ম করার ও রাষ্ট্রীয় সকল সুযোগ সুবিধা পাবে এক প্রকার অনুমতি দিয়ে দিলেন। বাঁশখালী ‍উপজেলায় যুবলীগের সভাপতি তাজুল চেয়ারম্যান পশ্চিম বাঁশখালী উচ্চ বিদ্যালয় ছাত্রলীগের দ্বিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেছিলেনঃ ছাত্রলীগ না করলে বিসিএস ক্যাডার হওয়া যাবে না। বাংলাদেশের যেকোনও চাকরি করতে হলে ছাত্রলীগ করতে হবে; অন্যথায় লিখিত বা মৌখিকে পাস করলেও কারো চাকরি হবে না। এনএসআই, ডিজিএফআই, এসবির লোকজন ছাত্রলীগার না হওয়ার কারণে পাস করলেও বাদ দিবে। শুধু নিজে ছাত্রলীগ নয়, নিজের পিতাকেও আওয়ামী লীগের রাজনীতি হতে হবে। এছাড়া বাঁশখালীতে যেকোনও চাকরি জন্য স্থানীয় এমপি মোস্তাফিজুর রহমানের রাজনীতি করতে হবে। তাহলেই সব কিছু করা যাবে অন্যথায় কোনও লাভ হবে না— তিনি আরো বলেনঃ যে লক্ষ্য নিয়ে আমরা নির্বাচিত হয়েছি,আমরা কিন্তু নৌকার পূজারী, বঙ্গবন্ধুর পূজারী, শেখ হাসিনার পূজারী।

এখানে আমাদের কাছে চাইলে সবকিছু পাবে। তোমার বাবা চাইলে বয়স্ক ভাতা পাবে, তোমরা চাইলে মাতৃত্ব ভাতা পাবে, তুমি পঙ্গু ভাতা পাবে, রাস্তা পাবে, টিউবওয়েল পাবে। আওয়ামী ও ছাত্রলীগ ছাড়া কেউ কিচ্ছু পাবে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ও আওয়ামী লীগপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন নীল দলের আহ্বায়ক আবদুল আজিজ শেখ মুজিবের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে হল শাখা ছাত্রলীগের আলোচনা সভায় বলেছিলেনঃ ছাত্রলীগ নেতাদের ‘রেজাল্টের প্রয়োজন নেই’। “তোমরা ছাত্রলীগ, তোমাদের গায়ে থাকা ক্ষতচিহ্নই তোমাদের বড় যোগ্যতা। তোমাদের আর কোনো যোগ্যতার প্রয়োজন নেই।”

শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুজিব হল শাখা ছাত্রলীগের আলোচনা সভায় সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরের কাছে দাবি তুলে ধরে বলেন ছাত্রলীগের চাকুরির জন্য রেজাল্টের কোন প্রয়োজন নেই। পরীক্ষার ফল বিবেচনায় না নিয়ে ছাত্রলীগের সব নেতাকর্মীকে চাকুরি দেয়ার জন্য মন্ত্রীর কাছে দাবি তুলেছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামী লীগ শিক্ষক নেতা হিসাবে। ফেসবুকে দেয়া স্ট্যাটাস কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ইশতেয়াক আহমদ জয় লিখেছিলেন - আমি দায়িত্ব পাওয়ার পর তিনটি নিয়োগে কক্সবাজার জেলা থেকে (নারী/পুরুষ) উভয় মিলে কন্সটেবল পদে ৪২৬ জন পুলিশে নিয়োগ পেয়েছে। সব নিয়োগই আওয়ামী লীগের তদবিরে হয়ছে অথচ এমন হতভাগা এক ছাত্র প্রতিনিধি আমি, যাদের কাউকেই আমি চিনি না। আমি এর কারন জানতে পুলিশ এসপি রুমে ঢুকেই দেখি জেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা আর উনি (এসপি) গল্প করছেন ও সিগারেট ফুঁকছেন। চাকুরি দেওয়া আমার সিপাহী পদে তার দেওয়া ৮ জনের লিস্ট কেন আসলো না জানতে জেলা আওয়ামীলীগ নেতা বলেন - মাত্র তিনলাখ। তিনলাখ টাকা হলে চাকরি হবে।

৩১ মে ২০২৩ ইং সালে সারাদেশে শিক্ষার্থী শিক্ষা জীবন শেষ করে চাকুরি না পেয়ে হতাশ হয়ে বেকারত্ব অভিশাপ নিয়ে সার্টিফিকেট মার্কশীট আগুনে পুড়িয়ে ফেলছে তখন তৎকালীন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে বার্তা দিচ্ছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতা টগর মো. সালেহ ও সাইফুর রহমান বাদশাকে চাকুরি দেন। প্রতিমন্ত্রী ছাত্রলীগ নেতা টগর মো. সালেহকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের অধীন শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন প্রকল্প-২-এর চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ট্রেনিং কো-অর্ডিনেটর এবং সাইফুর রহমান বাদশাকে একই প্রকল্পের ঠাকুরগাঁও জেলার ট্রেনিং কো-অর্ডিনেটর পদে চাকরির নিয়োগপত্র তুলে দেন। মন্ত্রী একবার ভাবলেন না তিনি কোন প্রকার নিয়ম, পরীক্ষা, যোগ্য-অযোগ্য মাপকাঠি না করে প্রতিযোগিতা ছাড়া শুধুমাত্র ছাত্রলীগের ক্যাডার বিবেচনায় তিনি তাদের হাতে নিয়োগ পত্র তুলে দিলেন।

মৌলভীবাজার পুলিশ লাইনসে মতবিনিময় সভায় ডামি এমপি সৈয়দা জোহরা আলাউদ্দিন বলেনঃ পুলিশ নিয়োগে আমাদের ছাত্রলীগের সকল নেতাকর্মী নিয়োগ দিতে হবে। উক্ত সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এই সরকারের আমলে শিক্ষক নিয়োগের বেশিরভাগই হয়েছে দলীয় বিবেচনায়। আর এটা করতে গিয়ে প্রকৃত মেধাবীদের ‘বঞ্চিত’ করা হয়েছে। প্রাধান্য পেয়েছেন তুলনামূলক কম মেধাবীরা। এমন ঘটনাও রয়েছে- অনার্স-মাস্টার্সসহ শিক্ষাজীবনের সব পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণীপ্রাপ্ত প্রার্থী থাকার পরও দ্বিতীয় শ্রেণীতে ৩২তম স্থান, বিএফএ-এমএফএ পাস প্রার্থী ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মী হওয়ার বিবেচনায় নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

বর্তমানে বাংলাদেশে ৫৭ টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আছে, যেখানে শিক্ষক নিয়োগের মতো বিষয়গুলোয় রীতিমতো ঘটছে মোটা অঙ্কের লেনদেন আর সরকারি দলের রাজনৈতিক পরিচয়ে। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ হল বিশ্ববিদ্যালয়গুলো; যেখানে শিক্ষক নিয়োগ হওয়া উচিত মেধার ভিত্তিতে। কিন্তু বাস্তবিকতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। এখন যেন ‘টাকা যার, রাজনৈতিক ক্ষমতা যার শিক্ষকতা তার।’ অর্থের বিনিময়ে পেশা বেচাকেনার বড় দায়িত্ব গ্রহণ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর দলকানা প্রশাসন।

চলতি বছরেই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউটে এক নেত্রীকে প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ দিতে চাপ প্রয়োগ করেছেন ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই নেতা ওই নেত্রী শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটনের (গার্লফ্রেন্ড) বলে পরিচিত। এসময় দুই ঘণ্টা উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করে রাখে তারা। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৫ সালে ১৭ এপ্রিল উপাচার্য অধ্যাপক মুহম্মদ মিজানউদ্দিনসহ অন্তত পাঁচ শিক্ষককে লাঞ্ছিত করেছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও তাঁর সহযোগীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগের জন্য চাপ দিতে উপাচার্যের দপ্তরে গিয়ে তাদের লাঞ্চিত করেন তারা। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় অচল করে দেওয়ার হুমকি দিয়ে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার উপাচার্যকে উদ্দেশ করে বলেন, 'আমাদের দেওয়া তালিকা অনুযায়ী নিয়োগ না দিলে আপনি বারবার অপমান-অপদস্থ হতেই থাকবেন। আর চাকরি দিলে শান্তিতে থাকবেন।

পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ে সকল নিয়োগ এখন রাজনৈতিক ও টাকার বিনিময়ে হয়ে আসছে। ৬৪টি জেলায় পুলিশ নিয়োগে মাঠে প্রার্থীদের জাতীয় পরিচয় পত্র, চারিত্রিক সনদ, ছবি, নাগরিকত্ব সনদপত্র, শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্র, অ্যাডমিট কার্ড, প্রয়োজনীয় বিভিন্ন কাগজ সহ অতি জরুরি আওয়ামী লীগের সদস্য প্রত্যয়নপত্র নিয়ে মাঠে যেতে হয়। তাছাড়া সাধারণ পরিবারের সন্তানদের চাকুরি পাওয়া অসম্ভব। বাংলাদেশের সরকারি প্রতিষ্ঠান সমূহে ও স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত ও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানে মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে চাকুরি পেতে হলে আমাদের কে একটি প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্র রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত লড়াইয়ে অংশগ্রহণ করতে হবে। শেখ হাসিনাকে বিদায় করে দেশের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

দেশে শিক্ষিত যুবক আছে,কিন্তু কর্মসংস্থান নাই। সকল পযার্য়ে দলীয়করণ, বৈষম্য, দুর্নীতি, দুঃশাসন এসব থেকে বাঁচতে একটাই সমাধান স্বৈরাচার হাসিনা মুক্ত বাংলাদেশ চাই। এই জন্য ছাত্রসমাজকে দায়িত্ব নিতে হবে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসের সূচনাবিন্দু ভাষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে, ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ, স্বৈরাচার এরশাদ পতন থেকে যে কোন ক্রান্তিলগ্নে পথ হারা রাষ্ট্রকে সঠিক পথে এনেছে ছাত্রসমাজ, ন্যায়ের পক্ষে সত্যের পক্ষে, বঞ্চিত মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করার সকল আন্দোলনে ছাত্রদের দাপট ছিল রাজপথে। সুন্দর বংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষে অবৈধ শেখ হাসিনার জোর করে মানুষকে ভয় দেখিয়ে ক্ষমতা দখল করে রেখেছে সে দখল থেকে ক্ষমতা ছিনিয়ে এনে জনগনের হাতে তুলে দিতে আমাদের দেশরক্ষায় ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনার আন্দোলনে ছাত্রসমাজ কে আবার রাজপথে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। আর সেই দেশরক্ষার ও অধিকার আদায়ের আন্দোলনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সামনের সারি থেকে নেতৃত্ব দিয়ে যে কোন ত্যাগ স্বীকার করে জীবন বিসর্জন দিয়ে হলেও আন্দোলন চালিয়ে যাবে।

স্বৈরশাসকের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে কালো চক্রান্তকে ব্যর্থ করার শপথ আমাদের, মৃত্যুর সাথে একটি কড়ার— আত্মদানের, স্বপ্নে একটি বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার। ছাত্রদল মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে, শিরদাঁড়া টানটান করে শত্রুর মোকাবিলা করবে, দেশকে বাঁচানোর প্রবল বাসনার ঝংকার—সমস্ত নৈরাশ্যকে ফুৎকারে উড়িয়ে দিবে। দৃপ্ত আর দীপ্ত ভঙ্গিতে প্রাণের প্রগলভতায় শপথ নিয়ে দেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করবে।

লেখক, আহ্বায়ক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল।