Image description

নিজস্ব প্রতিবেদক  
আরটিএনএন: জাপান প্রতি বছর যে পরিমাণ ডিজিটাল পণ্য ও সেবা রফতানি করে, আমদানি করে তার চেয়ে বেশি। ফলে এ খাতে দেশটি বাণিজ্য ঘাটতিতে পড়েছে। অ্যাপল, অ্যামাজন ও মাইক্রোসফটের মতো প্রতিষ্ঠান শত শত কোটি ডলার জাপান থেকে নিয়ে যাচ্ছে। তবে ডিজিটাল খাতের এ বাণিজ্য ঘাটতিকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন  কোনো কোনো অর্থনীতিবিদ। খবর দ্য জাপান টাইমস।

ডিজিটাল বাণিজ্য ঘাটতির কারণ হিসেবে জাপানে ক্রমবর্ধমান সর্বশেষ প্রযুক্তির ব্যবহারকে চিহ্নিত করেছেন মিৎসুবিশি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের গবেষক কেঙ্গো ওয়াতায়া। তিনি বলেন, ‘ডিজিটাল খাতে বাণিজ্য ঘাটতি বাড়ার মূল কারণ অনেক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান ডিজিটাল সেবা বা পণ্য ব্যবহার করছে। অর্থাৎ, ডিজিটালাইজেশন বাড়ছে। আমরা বিশ্বাস করি, এটা আমাদের জন্য ইতিবাচক।’

জাপানে গত বছর ডিজিটাল খাতে বাণিজ্য ঘাটতি ছিল ৩ হাজার ৪০০ কোটি ডলার। এ সময় দেশটি ক্লাউড সার্ভিস, অপারেটিং সিস্টেম, ই-মেইল সার্ভিস, সোশ্যাল মিডিয়া ও ইন্টারনেটভিত্তিক লেনদেন করতে গিয়ে প্রচুর অর্থ ব্যয় করেছে। এক দশক আগে এসব খাতে খরচ ছিল অর্ধেকেরও কম।

কেঙ্গো ওয়াতায়া মনে করেন, ‘ডিজিটাল খাতের বাণিজ্য ঘাটতি মূল্যায়ন করার ক্ষেত্রে ভালো ও মন্দ, দুই দিক থেকেই বিচার-বিশ্লেষণ করা উচিত।’ তিনি বলেন, ‘আমদানীকৃত পণ্য যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে এটা নিশ্চিত করা জরুরি যে এগুলো অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর নয়। আমদানীকৃত পণ্যকে অর্থবহ করে তুলতে হবে। সেই সঙ্গে এগুলো ব্যবহার করে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পণ্যের মান বাড়াতে হবে।’

প্রযুক্তি কী কাজে আমদানি হচ্ছে ও এর ফলাফল কী, বিষয়টিকে এভাবে দেখতে চান কেঙ্গো ওয়াতায়া। তিনি বলেন, ‘‌‘‌জাপানের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোর মূল শক্তি হলো তারা কাঁচামাল আমদানি করে এবং সেগুলো ব্যবহার করে ‍‘‌ˆমইড ইন জাপান’ ট্যাগ লাগানো পণ্য তৈরি করে বিভিন্ন দেশে রফতানি করে। আমি মনে করি, ডিজিটাল টেকনোলজির ক্ষেত্রেও একই লক্ষ্য থাকা উচিত। শুধু ক্লাউড ব্যবহারই যথেষ্ট নয়, এর মাধ্যমে উদ্ভাবনী কিছু করতে হবে।’’

একই অভিমত মেইজি ইয়াসুদা রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রধান অর্থনীতিবিদ ইউচি কোদামার। তিনি বলেন, ‘বিদেশী টেক জায়ান্টরা শুধু প্লাটফর্ম সরবরাহ করছে। এখানে মূল বিষয় হলো জাপানি ফার্মগুলো নতুন কিছু তৈরিতে এসব প্রযুক্তি কাজে লাগাতে পারছে কিনা।’

তবে কোনো কোনো অর্থনীতিবিদ মনে করেন, জাপানের প্রতিষ্ঠানগুলো ডিজিটাল টেকনোলজির সুবিধা পুরোপুরি ঘরে তুলতে না পারলে বাণিজ্য ঘাটতি ভবিষ্যতে একটা সমস্যা হয়ে দাঁড়াতে পারে। কেউ কেউ বলছেন, সম্প্রতি জাপানি মুদ্রা ইয়েনের দর কমে যাওয়ার পেছনে ডিজিটাল বাণিজ্য ঘাটতিরও প্রভাব রয়েছে।

গত মার্চে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে ‘নিক্কো অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট’। সেখানে ডিজিটাল বাণিজ্য ঘাটতিকে কাঠামোগত বলে উল্লেখ করা হয়। সেখানে বলা হয়, ‘জাপানের ডিজিটালাইজেশন প্রচেষ্টা এবং ডিজিটাল ঘাটতির ক্রমাগত বৃদ্ধির বিষয়টি কাঠামোগত। ফলে এর প্রভাবে ইয়েন ক্রমাগত দুর্বল হয়ে পড়তে পারে।’

নিরাপত্তার বিষয়টিও সামনে এনেছেন কেউ কেউ। বলা হচ্ছে, ক্লাউডে বিদেশী প্রতিষ্ঠানগুলোর আধিপত্য বেড়ে যাওয়ার মানে হলো গুরুত্বপূর্ণ কিছু অবকাঠামোয় জাপান তার আধিপত্য হারাবে।