রাজবাড়ী প্রতিনিধি
আরটিএনএন: কোটা আন্দোলনে সহিংসতার শিকার হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন সাগর হোসেন। তার ছবি এখন পরিবারের কাছে শুধুই স্মৃতি। এই ছবি কখনো হাতে, কখনো বুকে নিয়ে দিন কাটছে মা-বাবা ও বোনের। সাগরের বাড়ি রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলার নারুয়া ইউনিয়নের টাকাপোড়া গ্রামে।
সোমবার সরেজমিন সাগরের বাড়িতে দেখা যায়, বারান্দায় সাগরের ছবি বুকে নিয়ে বিলাপ করছেন বাবা তোফাজ্জেল হোসেন। পাশেই বসে আছেন মা ও বোন, যেন শোকে পাথর হয়ে গেছেন।
সাগরের বাবা বলেন, সাগর লেখাপড়ার পাশাপাশি হোটেলে খণ্ডকালীন কাজ করত। হোটেলে মানুষ খাবার খেতে এলে খাওয়া শেষে যে অবশিষ্ট খাবার থাকত, সেগুলো সে গরিব মানুষের মাঝে বিলিয়ে দিত। সাগর পরিবারের সবাইকে ঢাকায় নিয়ে যেতে চেয়েছিল এবং বলেছিল বাবা আর কয়েকটা দিন তোমাকে রোদে পুড়তে হবে, তারপর আর কষ্ট করতে হবে না। সে একবার আমাকে ডাক্তার দেখানোর জন্য ঢাকায় নিয়ে গিয়েছিল এবং আমাকে কত রকম খাবার যে খাইয়েছিল, তার ইয়ত্তা নেই।
সাগরের চাচা ও বালিয়াকান্দি মনসুর আলী কলেজের সহকারী অধ্যাপক মো. আসাদুজ্জামান বলেন, সাগরের মতো নিরীহ ও ভালো মনের ছেলে এ গ্রামে একটিও পাওয়া যাবে না। সহজ-সরল বাবার ছেলে হয়ে মানুষের সঙ্গে কখনো খারাপ আচরণ করত না। আমরা ভাবতেই পারিনি সাগর এভাবে অকালে মারা যাবে।
এ বিষয়ে বালিয়াকান্দি উপজেলার ৪নং নারুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জহুরুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, সাগরকে কখনো কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে থাকতে দেখিনি। ঢাকায় লেখাপড়ার পাশাপাশি তার বড় আশা ছিল, ছোট বোন এইচএসসি পাশ করার পর তাকে ঢাকায় নিয়ে কোচিং করাবে। কত কত স্বপ্ন ছিল সব শেষ হয়ে গেল। সে মারা যাওয়াতে মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছি। আমরা তার রুহের মাগফিরাত কামনা করছি।
কোটাবিরোধী আন্দোলনের সময় ১৯ জুলাই রাজধানীর মিরপুর গোলচত্বরে সহিংসতার শিকার হয়ে প্রাণ হারান সাগর।