সুলতান আহমেদ রাহী:
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে (২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ বর্তমান সময় ) বিভীষিকাময় পরিস্থিতির কারণে সব সময় চিহ্নিত হয়ে থাকবে। একটি দেশে গণতন্ত্রকে গলা টিপে হত্যা করে ক্ষমতাসীন দল চাইলে কতটা নারকীয় পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারে, তার নিদর্শন বর্তমান আওয়ামী লীগ শাসনামল। প্রতারণার মাধ্যমে ক্ষমতা জবর দখল করে শুরু হয়েছে অবৈধ সরকারি দলের পিশাচদের জান্তব উল্লাস।
প্রশ্নপত্র ফাঁস ও চাকুরিতে দুর্নীতি আজ মহামারিতে পরিণত হয়ে উঠেছে। কথায় আছে "যদি একটি জাতিকে ধ্বংস করতে চাও, তাহলে শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রতারণার আশ্রয় নাও।" আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনের নামে প্রতারণা করে ক্ষমতা দখল করে জাতিকে ধবংস করতেই শুরু করেছে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে অনিয়ম, দু্র্নীতি ও প্রতারণা। তারমধ্যে অন্যতম শিক্ষা ও বিভিন্ন পাবলিক চাকুরি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস, অর্থ বানিজ্য ও দুর্নীতি। আওয়ামী লীগের শাসনামলে প্রশ্নপত্র ফাঁস করে মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজে ভর্তি করা হয়েছে কয়েক হাজার শিক্ষার্থীকে। এদের শাসনামলে ১০ বার মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে যা প্রত্যক্ষ পরোক্ষভাবে আওয়ামী লীগ সরকারি দলের সিন্ডিকেট ও ছাত্রলীগ যুবলীগের নেতৃবৃন্দ জড়িত।
এই ভয়াবহ দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এই চক্র। সবচেয়ে আতংকের বিষয় চিকিৎসা সেবার মত মহান পেশায় তারা প্রশ্ন পেয়ে জালিয়াতি মাধ্যমে ভর্তি হয়ে এখন চিকিৎসক হিসাবে কর্মরত সারাদেশে ।
প্রথম শ্রেণি থেকে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা, প্রাইমারি, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ স্বায়িত্বশাসিত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, জিএসটি ভর্তি পরীক্ষা, নিবন্ধন, বিসিএস ক্যাডার নন-ক্যাডার পরীক্ষা, প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষাসহ পিএসসির অধিনে সকল সরকারি চাকুরি পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁস করা হয়েছে।
ইতিমধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহ বিভিন্ন প্রশ্ন ফাঁসে জড়িত থাকায় চলতি বছরে অন্তত ২১ জন ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা-কর্মীদের খালাস দেওয়া হয়েছে অথচ আমরা জানতাম সরকারি কর্মকমিশন (পিএসসি) পরিচালিত কোনো পরীক্ষায় ভুয়া পরিচয়ে অংশ নিলে দুই বছরের কারাদণ্ড এবং প্রশ্নপত্র ফাঁসের অপরাধে সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ডের বিধান রেখে বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন অধ্যাদেশ, ১৯৭৭ রহিত করে নতুন আইন প্রণয়ন জাতীয় সংসদে বিল উত্থাপন করা হয়েছে কিন্তু সরকারি দলের নেতা-কর্মী হওয়ার কারনে তারা অপরাধ করেও পার পেয়ে যাচ্ছে ।
আওয়ামী লীগ সরকারি দলের নেতা-কর্মীদের সিন্ডিকেটে জড়িত থাকার সুবাদে সরকার বিভিন্ন সরকারি চাকুরি পরীক্ষায় দুর্নীতি ও প্রশ্ন ফাঁস, জালিয়াতি রোধ করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ২০০৯ সালে ৩ জানুয়ারি শপথ গ্রহন করে ক্ষমতায় এসে পাবলিক সার্ভিস কমিশনে (পিএসসি) অযোগ্য দলকানা নতুন সদস্য নিয়োগ করে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি পরিণত করছে দলীয় কার্যালয়ে! নিয়োগপ্রাপ্ত সদস্যরা সকলে ছিলেন ক্ষমতাসীন দলের ঘনিষ্ঠজন। এমনকি সরাসরি ছাত্রলীগ যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত এমন মানুষকে পদে বহাল রেখে সদস্য করা হয়েছে ! সদস্য করা হয়েছে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার ফুপাতো ভাই মোহাম্মদ হোসেন সেরনিয়াবাত, তিনি ছিলেন একজন দুর্নীতি দায়ে আসামি, তার নামে রয়েছিলে মিগ-২৯ যুদ্ধবিমান ক্রয় সংক্রান্ত দুর্নীতি মামলা। সদস্য করা হয়েছিলো আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, মন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানকের বোন রাশিদা বেগম কে। সদস্য নিয়োগ পেয়েছিলেন অবৈধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা এইটি ইমামের আপন ভাগ্নে সৈয়দ হাসিনুর রহমান। রয়েছে সাবেক মন্ত্রী তারানা হালিম এমপির দুলাভাই ইকরাম আহমেদ, তিনি কেন্দ্রীয় যুবলীগের নেতা, রয়েছে ছাত্রলীগের সাবেক নেতা লিয়াকত আলী খান ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সাবেক মন্ত্রী মহিউদ্দিন খান আলমগীরের ভাগ্নি ফরিদা আদিব খানম ।
এসব দলকানা সদস্যদের মাধ্যমে বিসিএসসহ সকল পাবলিক সরকারি চাকুরি পরীক্ষায় নিয়োগ দেওয়া হয়েছে অর্থের বিনিময়ে, জালিয়াতি মাধ্যমে, প্রশ্ন ফাঁসের মাধ্যমে ও অমেধাবী ছাত্রলীগের ক্যাডারদের। বর্তমানে প্রথম শ্রেণী থেকে শুরু করে প্রায় সব প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় নিয়মিত প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা ঘটছে অথচ কার্যকর কোন পদক্ষেপ নেই। দেশে নেই কোন শক্ত আইন ও প্রতিরোধ। আইনশৃঙ্খলার বাহিনী কাজ ছিলো চক্রটিকে আটক করা, কিন্তু তারা নিজেরা অপশাসন জবাবদিহিতা না থাকার কারনে তারা জড়িয়ে পড়েছে বিভিন্ন অন্যায়, দুর্নীতি করে অর্থ, সম্পদ লুটপাট করে বিত্তশালী হওয়ার নোংরা প্রতিযোগিতায়। শুধুমাত্র অবৈধ সরকারের ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার জন্য দুঃশাসন বৃদ্ধির জন্য একজন লোভাতুর, ক্ষমতালিপ্সু, পাষণ্ড, অশান্তিকামী নারীকে প্রধানমন্ত্রী আসনে বসিয়ে ক্ষমতায় রাখতে প্রতিনিয়ত বিএনপি ছাত্রদল অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের গুম, খুন, মিথ্যা মামলা ও গ্রেফতারের মাধ্যমে চলছে জান্তব উল্লাস। এসবের শক্তভাবে প্রতিবাদ করতে না পারে এই জন্য পরিকল্পিত ভাবে সাবেক সফল প্রধানমন্ত্রী, চার কোটি ছাত্রসমাজের যিনি শেষ আশ্রয়স্থল ছিলেন তাকে বন্দী রেখে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছেন ১৮ কোটি জনগণের মা আপসহীন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে। ক্ষমতা দাপট অহমিকায় আজ স্বৈরশাসকরা বধির। কথায় আছে "যত বিপর্যয় মানুষেরই কৃতকর্মের ফল।" প্রতারণার মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে যখন সরকারি সম্পদকে দায়িত্বশীল ব্যক্তি নিজের সম্পদের মতো আত্মসাৎ করবে। তখন রুখে দাঁড়াতে পারলে তাদের অবৈধ ক্ষমতার মসনদে বিপদ এমনভাবে আসবে যা একের পর এক আসবে। যেমনি কোনো মুক্তার মালার সুতা ছিঁড়ে গেলে দানাগুলো একের পর এক ঝরে পড়ে তেমনি এখন বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশনায়ক জনাব তারেক রহমানের হাতকে শক্তিশালী করে ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে পারলে বাংলাদেশের সকল সমস্যা মালার সুতার পুথির দানার মত দুঃশাসন, অন্যায়, অবিচার, প্রশ্ন ফাঁস, চাকুরিতে দুর্নীতি, বৈষম্য একের পর এক ছিঁড়ে ঝরে পড়বে। সৃষ্টি হবে আবার সুজলা-সুফলা শস্য শ্যামলা আমাদের এই সুন্দর নতুন বাংলাদেশ। সবুজ ছায়ায় ভরে উঠবে বাংলার মেঠো পথ। জাগবে জনগণের মনে শান্তির সুখের আরাধনা, মানুষ আবার আঁকবে মনে বিচিত্র আল্পনা। কেননা ইতিহাস স্বৈরশাসক, প্রতারক দুর্নীতিবাজ শাসককে আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ হয়েছে। আওয়ামী লীগ সেই পথে যাবে।সর্বকালের নিষ্ঠুর শাসক কখনো টিকতে পারেনি।
খ্রিষ্টপূর্ব ২২১ সালে একীভূত চীনের প্রথম সম্রাট হন কিন শি হুয়াং তিনি প্রথম সম্রাট হিসেবে রাজ্য শাসন করেন। এই শাসক কুখ্যাত পরিচিত পেয়েছিলেন তার সঙ্গে দ্বিমত পোষণকারীদের হত্যার জন্য এবং তার সমালোচনামূলক সকল বই পোড়ানোর আদেশের জন্য। চীনের প্রাচীরের প্রথম পরিকল্পনাকারী তিনিই। কিন শি হুয়াং একদিকে যেমন কল্যাণকর অর্থনৈতিক সংস্কার করেছিলেন অন্যদিকে বেপরোয়া রাজনৈতিক দমন-পীড়ন চালিয়েছিলেন প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে। শেষ জীবনে অমরত্ব লাভের বড় সাধ ছিল সম্রাটের। সে জন্য সন্ধান করে বেরিয়েছেন অবিনশ্বর জীবনলাভে বিভিন্ন অলৌকিক ওষুধ। অমরত্ব লাভের আশায় পারদের তৈরি ভুল ওষুধ খেয়ে ৫০ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। তাই অবৈধ ভাবে জনগণের ইচ্ছার বিপক্ষে গিয়ে জবর দখল করে ক্ষমতার অমরত্ব নকশা তৈরি করছে যারা তাদের পতনও হবে ঠিক সুতার গাঁথা মালার পুথির দানা ছিঁড়ে ঝরে পড়ার মত।
লেখক, আহবায়ক,রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল।