বিশ্বজুড়ে বহু মানুষই এমন অপর্যাপ্ত কিংবা অস্বস্তিকর ঘুমের সাথে লড়াই করছে। ধারণা করা হয়, শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেই ৫০ থেকে ৭০ মিলিয়ন মানুষ এই সমস্যার শিকার। এমনকি বিশ্বব্যাপী এটিকে একটি মহামারি বলা হয়।
ধরুন, সকালে আপনার ঘুম ভেঙেছে। জানালা দিয়ে আলো আসছে, পাখির কিচিরমিচির ডাকও শোনা যাচ্ছে। তবে আপনার ঘুম থেকে উঠতে ইচ্ছা করছে না। কেননা রাতে আপনার ঘুম ভালো হয়নি।
বিশ্বজুড়ে বহু মানুষই এমন অপর্যাপ্ত কিংবা অস্বস্তিকর ঘুমের সাথে লড়াই করছে। ধারণা করা হয়, শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেই ৫০ থেকে ৭০ মিলিয়ন মানুষ এই সমস্যার শিকার। এমনকি বিশ্বব্যাপী এটিকে একটি মহামারি বলা হয়।
তবে কিছু মনস্তাত্ত্বিক ও শারীরিক কৌশল রয়েছে যা আপনার ঘুমের মান উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে। একটি গভীর ও প্রশান্তিদায়ক ঘুমের জন্য বৈজ্ঞানিক গবেষণা এবং কিছু পুরোনো কৌশলের ওপর ভিত্তি করে এই গাইডলাইনগুলো তৈরি করা হয়েছে।
দুই শিফটে ঘুমানো
যখন মানুষ মাঝরাতে ঘুম ভেঙে জেগে ওঠে, তখন আতঙ্কিত হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। সর্বোপরি, আমরা বিশ্বাস করি যে, আমাদের একটানা আট ঘণ্টা ঘুমানো উচিত। কিন্তু সবসময় এমনটা হয়না। হাজার বছর আগে মানুষ প্রথমে খুব অল্প সময় ঘুমাতো এবং তারপর উঠে যেত।
দুই ঘুমের মাঝের এই সময়গুলো গৃহস্থালির কাজ থেকে শুরু করে গল্প করতেন। তারপর ঘণ্টা দুয়েক পরে মানুষ আবার বিছানায় গিয়ে ঘুমাতো এবং সকালে উঠে যেতো।
এটি 'দুই ধাপে ঘুম' বিস্মৃত প্রাচীন প্রথা। ১৯৯০-এর দশকে ভার্জিনিয়ার ইতিহাসের একজন বিশিষ্ট অধ্যাপক রজার একির্চ এটি বের করেছিলেন।
তিনি বিশ্বাস করেন, এই অভ্যাস তুলে ধরে সচেতনতা তৈরি করলে তা অনিদ্রায় ভুগতে থাকা ব্যক্তিদের ঘুমের অভ্যাসকে ফিরিয়ে আনতে সহায়তা করবে। একইসাথে তাদের রাত জাগার বিষয়ে উদ্বেগ কমাতে সাহায্য করবে।
ঋতুর সাথে ঘুমের পরিবর্তন
বসন্তের আগমনের সাথে সাথে আপনি লক্ষ্য করবেন যে, আপনার বেশী ঘুমের দরকার হচ্ছে না। সেক্ষেত্রে সকালে আপনার জন্য বিছানা ছেড়ে ওঠা সহজ হয়ে গিয়েছে।
গবেষণা দেখা যায় যে, গ্রীষ্মের তুলনায় শীতে আমাদের বেশি ঘুমের প্রয়োজন হয়। কারণ এ সময়ে মানুষ মৌসুমি ঘুম অনুভব করে। এক জার্মান সমীক্ষা অনুসারে, লোকেরা জুনের তুলনায় ডিসেম্বরে দীর্ঘ সময় র্যাপিড আই মুভমেন্ট (আরইএম) এবং গভীর ঘুম উভয়ই অনুভব করে।
আরইএম হল ঘুমের সবচেয়ে সক্রিয় পর্যায়। এ পর্যায়ে আমরা স্বপ্ন দেখি এবং হৃৎস্পন্দন বেড়ে যায়। ঘুম যখন গভীর হয় তখন শরীরের পেশি ও টিস্যু মেরামত হয়। এটি দীর্ঘমেয়াদি স্মৃতি একত্রীকরণের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।
হালকা ঘুমানোর চেষ্টা করুন
অনেক দেশে ক্যাটন্যাপ প্রতিদিনের একটি রীতি। গবেষণায় দেখায় যে, নিয়মিত ঘুম স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।
২০২৩ সালের গবেষণা অনুযায়ী, মাঝে হালকা ঘুম আমাদের মস্তিষ্ককে দীর্ঘ সময়ের জন্য আয়তনে বড় রাখতে সাহায্য করে এবং মস্তিষ্কের বার্ধক্যকে তিন থেকে ছয় বছরের মতো বিলম্বিত করতে পারে। ছোট আয়তনের মস্তিষ্ক আলঝেইমার এবং ভাস্কুলার ডিমেনশিয়ার মতো রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
এছাড়াও ক্যাটন্যাপের রয়েছে স্বল্পমেয়াদি সুবিধা। অল্প সময়ের ঘুম যা ১৫ মিনিটের বেশি স্থায়ী হয় না, তা আমরা মানসিকভাবে কার্যকরী কাজ করার সক্ষমতা বাড়াতে পারে। এর ফলাফল আমাদের ঘুম থেকে ওঠার তিন ঘণ্টা পর্যন্ত স্থায়ী হয়।
পাওয়ার ন্যাপের চাবিকাঠি হল ঘুমকে অল্প সময়ে রাখা। ২০ মিনিটের পরে আমরা গভীর ঘুমে যেতে শুরু করি। এক্ষেত্রে নিশ্চিত করতে হবে যে, আপনার রুটিনে মাঝ দুপুরের দিকে একটু বিরতি রয়েছে; যা আপনার রাতের ঘুমকে ব্যাহত করে না।
মাইক্রোস্লিপের বিপদ থেকে সাবধান
কিন্তু সব ঘুম আমাদের জন্য ভালো নয়। কিছু ঘুম মাত্র কয়েক সেকেন্ড স্থায়ী হয়। যদি আপনি গাড়ি চালানোর সময় এমন ঘটে তবে এই মাইক্রোস্লিপ গুরুতর ক্ষতির কারণ হতে পারে।
জাপানের একটি ট্রাক কোম্পানির ৫২ জন চালকের ড্যাশক্যাম ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, তাদের মধ্যে তিন চতুর্থাংশের সংঘর্ষের আগে মাইক্রোস্লিপের লক্ষণ দেখা গিয়েছে।
যারা নারকোলেপসিতে ভুগছেন বা যারা রাতে পর্যাপ্ত ঘুমাতে পারেন না তাদের মধ্যে মাইক্রোস্লিপ বেশি দেখা যায়। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, লোকেরা যখন একটানা ১৪ দিন ধরে রাতে মাত্র ৬ ঘণ্টা ঘুমায় তাদের এবং যারা সারারাত পর্যাপ্ত ঘুমান না তাদের মাইক্রোস্লিপ সমান। আপনি যদি নিয়মিত মাইক্রোস্লিপ অনুভব করেন তাহলে এটি সম্ভবত অপর্যাপ্ত ঘুমের একটি লক্ষণ।
আরাম করে শোয়ার চেষ্টা করুন
স্বাভাবিকভাবেই বেশিরভাগ মানুষ নিজের বিছানায় একা ঘুমান না। বরং অন্যদের সাথে তা ভাগ করে নিতে হয়। সেক্ষেত্রে আরাম করে ঘুমানো যায় না। এমনকি বিছানায় ল্যাপটপ কিংবা অন্য কোনো বস্তু থাকলেও ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে।
ঘুমের পরিমাণের চেয়ে ঘুমের মানের উপর নজর দিন
আমাদের সকলের কতটা ঘুম দরকার তা ব্যক্তি অনুযায়ী আলাদা হতে পারে। বেশিরভাগ মানুষই সাথে সাত থেকে নয় ঘণ্টার মধ্যে তাদের ঘুম সম্পন্ন করেন। কিন্তু আপনি যে পরিমাণ ঘুমান তা সমীকরণের একটি অংশ মাত্র। অনেক বেশী ঘুমানোর চেয়ে ঘুমের গুণমান বেশী গুরুত্বপূর্ণ।
আমাদের মধ্যে বেশিরভাগই রাতে ঘুমানোর সময় এপাশ-ওপাশ করার পরে কম সতেজ বোধ করে থাকি। এর আংশিক কারণ আমরা যখন ঘুমাই তখন আমাদের মস্তিষ্কে সেরিব্রোস্পাইনাল তরল প্লাবিত হয়; যার ফলে জমে থাকা বিষাক্ত পদার্থ পরিষ্কার হয়। এই বর্জ্য-ক্লিয়ারেন্স সিস্টেমটকে 'গ্লিম্ফ্যাটিক সিস্টেম' বলা হয়। যা প্রতিদিন একই সময়ে সবচেয়ে ভালো কাজ করে।
আধুনিক বিছানা ব্যবহার করুন
বর্তমানে পশ্চিমা বিশ্বের অধিকাংশ মানুষ নরম বিছানায় ঘুমাতে অভ্যস্ত, যা সম্ভবত একটি স্প্রিং ম্যাট্রেস বা মেমরি ফোমের তৈরি। যাই হোক, বিষয়গুলো সবসময় এত সহজ এবং আরামদায়ক ছিল না। আগে নরম কিংবা আধুনিক বিছানা নিশ্চিত করতে মানুষকে অনেক বেগ পোহাতে হতো।