আজিবুল হক পার্থ
আরটিএনএন: মাধ্যমিকে সারা জাগানো জিপিএ-৫ পাওয়া এক লাখ ৮২ হাজার ১৩২ শিক্ষার্থী তাদের পছন্দমতো কলেজে ভর্তি নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছে। এরই মধ্যে শুরু নানা হিসাব নিকেশ। চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে করেজের আসন সংখ্যা পাসকৃত শিক্ষার্থী ও এর মধ্যে র্যাঙ্কিং করা কলেজের সংখ্যা ও আসনের পরিমাণ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশে মানসম্পন্ন ও ভালো কলেজ হিসাবে বিবেচিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা দুই শতাধিক। এতে আসন আছে এক লাখের কাছাকাছি। এসব কলেজেই শিক্ষার্থীদের ভর্তির আগ্রহ বেশি। তবে মেধাবী শিক্ষার্থীদের আগ্রহ থাকে রাজধানীর নামিদামি কলেজের প্রতি। ঢাকায় মানসম্পন্ন কলেজের সংখ্যা ২৫ থেকে ৩০টির মতো। মূলত এই কলেজগুলোতেই ভর্তিতে তীব্র প্রতিযোগিতা হয়ে থাকে। এবারও সেই আশঙ্কাই করা হচ্ছে।
সারা দেশে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তিযোগ্য কলেজ ও মাদ্রাসার সংখ্যা ৯ হাজারের বেশি। সরকারি ও বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট আছে ৫শর বেশি। সব মিলিয়ে একাদশে ভর্তিযোগ্য আসন রয়েছে ২৫ লাখের মতো। বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) তথ্যানুসারে, এসএসসিতে পাশ করা সবাই একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হলেও আট লাখ ২৭ হাজারের বেশি আসন ফাঁকা থাকবে। শিক্ষা বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি হচ্ছে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার দৈন্যতা। কারণ কিছু কলেজ বরাবর ভালো করছে। বাকি কলেজগুলো কেন ভালো ফল করতে পারছে না সে নিয়ে কোনো গবেষণা বা চাপ নেই।
এবার পূর্ণাঙ্গ সিলেবাসে পরীক্ষা হলেও এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় গতবারের তুলনায় পাশের হার বেড়েছে। এ বছর মোট পাশ করেছেন ১৬ লাখ ৭২ হাজার ১৫৩ জন, যা গতবারের তুলনায় ২ দশমিক ৬৫ শতাংশ বেশি। এবার পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছিলেন ২০ লাখ ২৪ হাজার ১৯২ জন পরীক্ষার্থী। এবার গড় পাশের হার ৮৩.০৪ শতাংশ। এর মধ্যে এসএসসি, দাখিল আর কারিগরি- এই তিন ধারার শিক্ষার্থী আছেন। তাদের মধ্যে ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে শুধু এসএসসিতে পাশ করেছেন ১৩ লাখ ৪৫ হাজার ৬৭৮ জন, মাদ্রাসায় ২ লাখ ২৬ হাজার ৭৫৪ জন, আর কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ৯৯ হাজার ৭২১ জন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, এবার কেবল এসএসসির সর্বোচ্চ সাফল্য হিসাবে চিহ্নিত জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৬৩ হাজার ৮৪৫ শিক্ষার্থী। দাখিল ও কারিগরি থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১৮ হাজার ২৮৪ জন। সব মিলিয়ে ১ লাখ ৮২ হাজার ১২৯ জন জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর চাওয়া ভালো মানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি।
এছাড়া জিপিএ-৫ এর নিচে কিন্তু জিপিএ-৩.৫ থেকে জিপিএ-৪ পর্যন্ত পাশ করা শিক্ষার্থী আছেন ৯ লাখ ৭ হাজার ১৫১ জন। এসব শিক্ষার্থীও ভালো মানের প্রতিষ্ঠানের দিকে ছুটে থাকেন। এর বাইরে গত বছর ভর্তি না হওয়া কিছু শিক্ষার্থীও লেখাপড়া করতে আসেন।
শেরেবাংলা নগর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগ গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়ে এসএসসি পাশ করেছেন প্রত্যাশা মন্ডল। তিনি জানান, একাদশে ভর্তির জন্য হলিক্রস কলেজ তার পছন্দের শীর্ষে। তবে এই কলেজে ভর্তি প্রতিযোগিতা বেশি হয়। তাই ভর্তি নিয়ে এক ধরনের অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছেন তিনি।
এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা পছন্দের কলেজে ভর্তি হতে পারবেন কিনা তা নিয়ে এবার দুশ্চিন্তা অভিভাবকসহ সবার। এর মূল কারণ হচ্ছে ভালো মানের কলেজ ও আসন সংকট। প্রতিবছর ভালো ফলাফল করেও ভালো মানের কলেজে ভর্তি হতে না পেরে অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী পড়ালেখায় অমনোযোগী হয়ে পড়েন। পরে তাদের শিক্ষাজীবন ধরে রাখতে অভিভাবকরা যেনতেন কলেজে ভর্তি করে দেন। আর ওসব কলেজে লেখাপড়ার মান ও পরিবেশ অনুকূলে না থাকায় শিক্ষার্থীরা হতাশ হয়ে পড়েন।
এর প্রভাব পড়ে পরবর্তীকালে উচ্চ মাধ্যমিকের ফলাফলে। এমনকি উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রেও। ফলে যারা এবারও ভালো ফলাফল করেছেন তাদের জন্য ভালো মানের কলেজে ভর্তি হওয়াটাই চ্যালেঞ্জ। কিন্তু দেশে সেই তুলনায় মানসম্মত প্রতিষ্ঠান কম। এ ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা একটু বেশিই সংকটে আছেন। এছাড়া যারা ইংরেজি ভার্সন থেকে পাশ করেছেন, তাদের একই ভার্সনে ভর্তি হতে গিয়ে বেশি সমস্যায় পড়তে হয়। রোববার মাধ্যমিকের ফল হাতে পাওয়ার পর থেকেই শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা পছন্দের কলেজ সম্পর্কে খোঁজখবর নিতে শুরু করেছেন। এবার এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ১৬ লাখ ৭২ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী পাশ করেছেন।
এর মধ্যে এক লাখ ৮২ হাজার ১৩২ শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছেন। সারা দেশে উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তিযোগ্য আসন ২৫ লাখের মতো। কিন্তু মানহীন কিছু কলেজ শিক্ষার্থী টানতে ব্যর্থ হয় প্রতিবছরই। কোথাও কোথাও অনুমোদিত আসনের বিপরীতে পঞ্চাশ শতাংশ শিক্ষার্থীও পাওয়া যায়নি। তবে যেসব প্রতিষ্ঠান ফলাফলের দিক থেকে এগিয়ে থাকে, সেই মানের কলেজ ও আসন সংকট থেকেই যাচ্ছে।
আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ২৬ মে থেকে অনলাইনে ভর্তি আবেদন প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে। ১১ জুন পর্যন্ত এই প্রক্রিয়া চলবে। এ বিষয়ে শিগগিরই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবে শিক্ষা বোর্ড ও মন্ত্রণালয়।
সার্বিক বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার আরটিএনএনবিডিকে বলেন, একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি ক্ষেত্রে আসনের কোনো সমস্যা নেই। সংকট হচ্ছে, অনেকেই হাতেগোনা কিছু প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে চায়। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের পছন্দমতো ভালো মানের প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কম। এ কারণে যারা ভালো ফলাফল করেছেন কিছু প্রতিষ্ঠানে তাদের ভর্তির ক্ষেত্রে বেশি প্রতিযোগিতা করতে হবে। বিশেষ করে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে এই প্রতিযোগিতা বেশি হবে। এছাড়া এসএসসি পাশের পর মফস্বলের অনেকেই রাজধানীমুখী হয়। এতে করে পছন্দের শীর্ষে থাকা কিছু প্রতিষ্ঠানে তুমুল ভর্তিযুদ্ধ হবে। আগামী ২৬ মে থেকে অনলাইনে আবেদন নেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।
জানা গেছে, গত কয়েক বছর ধরে চার্চ পরিচালিত রাজধানীর চারটি কলেজ- হলিক্রস, সেন্ট যোসেফ, সেন্ট গ্রেগরি এবং নটর ডেম কলেজে ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি নিয়ে থাকে। দেশের বাকি কলেজ ও মাদ্রাসায় এবারও প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে মেধাক্রম অনুসরণ করে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে। এ ক্ষেত্রে টেলিটকের মাধ্যমে আবেদন নেওয়া হবে। পরে বোর্ডে থাকা শিক্ষার্থীর প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে মেধাতালিকা করা হবে। এবারও শিক্ষার্থীরা অনলাইনে সর্বোচ্চ ১০টি কলেজে ভর্তির জন্য আবেদন করতে পারবেন।